ভাঙা বেড়া, টিনের চালাও ফুটা, আসবাব সঙ্কটে রামুর গনিয়াকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়

শাহীন মাহমুদ রাসেল :

রামু উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কনক্রিটের ছাঁদ পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি উন্নত আসবাব বেঞ্চ, টেবিল ,চেয়ার ইত্যাদি নানা সংকটের মধ্যে কোনমতে টিকে আছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বেঞ্চ না থাকায় পাটিতে বসেই পাঠদান নিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ঝড়ে টিনের চালা উড়িয়ে নেয়ার পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও মেরামত না হওয়ায় ভাঙ্গা টিনের চালার নিচেই লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একই প্রতিষ্ঠানের প্রাচীর না থাকায় পাশের অনিরাপদ পুকুরে ডুবে শিশু শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ভয় কিংবা শাপ বিচ্ছুর অভয়াশ্রমে পরিণত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কিন্ডারগার্টেন মূখী হচ্ছে। ফলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও দরিদ্র শ্রেনির লোকজন।

বছরের পর বছর কক্সবাজারের রামু উপজেলার গনিয়াকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারদিকে ভাঙাচোরা চাটাইয়ের বেড়া এবং ফুটো টিনের নিচে ক্লাস চলছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়।
রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের গনিয়াকাটা গ্রামে অবস্থিত ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরণ না হওয়ায় এবং বিত্তবানদের সহযোগীতার অভাবে এমন অবস্থা বলে মরে করেছেন তারা। আর ভবনের অভাবে শিশুদের ঠিকমতো পাঠদান করাতে পারছেন না। কষ্টের মধ্যেও বিদ্যালয়ে পাঠ নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ভালো ফলাফল করছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, চাটাই দিয়ে ঘেরা বেড়া ও টিনের চালার নিচে একটি কক্ষে ক্লাস চলছে। নিচে ভেজা মাটি, যার ওপর বসে ক্লাস করছে শিশুরা। নেই বেঞ্চ, নেই আসবাবপত্র, শিশু থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস শেষ হয়েছে। এরপর শুরু হবে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ভালো।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়াত উল্লাহ জানান, গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার কয়েকজন শিক্ষানুরাগী এম.ইউ.পি হাবিব উল্লাহ ২০১৩ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামের ছিদ্দিক আহাম্মদ নামের একজন স্কুলের জন্য ৩০ শতক জমি দান করেন। যে জমির ওপর গ্রামের কিছু মানুষের সহযোগিতায় চাটাই-টিন এক কক্ষের একটি ঘর করা হয়। একটিতে কক্ষে ক্লাস চলে, আর ছোট একটি কক্ষে বসেন শিক্ষকেরা। তিনি জানান, মোট চারজন শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করে আসছেন।
প্রধান শিক্ষক আরও জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৩০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।

২০১৭ সাল থেকে তারা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। এই পর্যন্ত যারা সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। তাদের সবাই পাশ করেছে। তিনি বলেন, পড়ালেখায় তাদের স্কুল খুবই ভালো করছে। তারপরও বিদ্যালয়ের দিকে কারও নজর নেই। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন, এই দীর্ঘ সময় তাঁরা স্কুলটিতে পাঠদান করে এলেও পাঠদান উপযোগী একটি ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এখন তাঁরা কষ্ট করে শিশুদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ে পানি জমে যায়, টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে। এ কারণে ক্লাস বন্ধ করে দিতে হয়। এ ছাড়া গরমের সময় টিনের চালার নিচে বসে থাকা যায় না। বাচ্চারা খুবই কষ্ট পান। শিক্ষকেরা আরও অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন।

স্থানীয় কলেজ ছাত্র মুবিনুল হাসান নয়ন বলেন, প্রায় ১০০-১৫০ শিশুর জ্ঞান আহরনের স্থান এই বিদ্যালয়টি। বসার বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল না’থাকায় শিশুরা নিচে বসে পড়ালেখা করে, শুষ্ক মৌসুমে পড়ার সুযোগ হলেও বর্ষাকালে কাঁদা মাটিতে বসে পড়ালেখা করতে বেকায়দায় পড়তে হয় সবাইকে। চারপাশে নেই কোন ইট,কংক্রিটের দেয়াল। আপাতত টিনের বেড়া থাকলে ও তা এখন ব্যবহারের উপযুক্ত না। শিশুর মেধা বিকাশের এই স্থানটি মেরামত করা অত্যন্ত জরুরি। সকলের স্বদিচ্ছায় সাহায্যের হাত বাড়ালে একদিন কোমলমতি শিশু স্বপ্ন দেখার সুযোগ পাবে দেশ, সমাজ, জাতির উন্নয়নের ভূমিকা পালন করতে। আপনাদের একটু সহানুভূতি গড়তে পারে একটি শিক্ষিত সমাজ ও জাতি।

কক্সবাজারের রামু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোর চন্দ্র দে জানান, আমি নতুন এসেছি ওই স্কুলটি সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। ভবন নির্মাণের জন্য সে উচ্চপর্যায়ে লিখবেন। আশা করছেন দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষকেরাও তাঁদের বেতন পাবেন।

আরও খবর